২৫ বছর পরও জানা গেলো না বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় তারকা সালমান শাহের মৃত্যু রহস্য। সর্বশেষ তদন্ত সংস্থা পিবিআইও বলছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। আর তার মায়ের দাবি এটি হত্যাকাণ্ড। তবে বাংলাদেশের মানুষ এখনো তাকে ভুলতে পারেনি। তার প্রয়াণ দিবসে দেশের বিভিন্ন স্থানে দোয়া ও স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। এসব সভা থেকে এই মহাতারকার মৃত্যুর আসল রহস্য উদঘাটনের দাবি জানানো হয় বারবার। ১৯৯৬ সালের এই দিনে (৬ সেপ্টেম্বর) সালমান শাহের লাশ ১১/বি নিউ ইস্কাটনের বাসার নিজ কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। সালমানের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন।

পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই সালমানকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করা হয়। কয়েকটি সংস্থার তদন্তে সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু তা এখনো মেনে নিতে পারেনি পরিবার ও তার অগনিত ভক্ত। সর্বশেষ ২০১৬ সালের শেষের দিকে পিবিআইকে নতুন করে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। গত বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলাটিতে সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন মর্মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম। পিবিআই’র দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনটির ওপর নারাজি দিবেন সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরী।

সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদের আদালতে মামলাটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু সালমান শাহর মা লন্ডনে থাকায় নারাজি দাখিলে সময়ের আবেদন করেন তার আইনজীবী। আদালত সময় আবেদন মঞ্জুর করে শুনানির জন্য আগামি ৩১ অক্টোবর নতুন তারিখ ধার্য করেন। মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে সালমান শাহ’র মামা আলমগীর কুমকুম জানান, ‘দু:খিত, এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। সালমান শাহকে হত্যার বিচার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিলাম। আল্লাহ সবকিছু জানেন। তার কাছে আমরা বিচার পাবো।’ তিনি জানান, ‘সালমান শাহ‘র জন্মের পর তার নাড়ি হযরত শাজহালাল (র.) এর মাজারে পুঁতে রাখা হয়।

আর মৃত্যুর পর তার লাশও কবর দেওয়া হয়েছে সেখানে। আশা করি সালমান শাহ হত্যার বিচার আমরা পাবো। আমরা বিচারের অপেক্ষায় আছি।’ আলমগীর কুমকুম বলেন, ‘আল্লাহ সবকিছু জানেন। দেখেন না সামিরা ৩ বাচ্চা রেখে আবার বিয়ে করছে। আল্লাহ সবকিছু দেখছেন না। সবাই পরীমণিকে নিয়ে ব্যস্ত। পরীমণি কোনো অপরাধ করেনি! সেখানে সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে। অথচ আমরা ২৫ বছরেও বিচার পেলাম না। সর্বশেষ পিবিআই মামলাটি তদন্ত করছে। আদালত তাদের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। তারা তদন্ত করেছে। তদন্তে কি হলো সেটা কি তারা প্রকাশ করতে পারে। অথচ সাংবাদিক সম্মেলন করে তারা সবকিছু বলেছে।

এটা তো আদালতের বিষয়। তারা কেন এটা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন।’ বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ জানান, ‘সালমান শাহ হত্যা মামলায় পিবিআই যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে আমরা এর বিরুদ্ধে নারাজি দাখিল করবো। সালমান শাহর মা মামলার বাদী নীলা চৌধুরী লন্ডনে আছেন। তিনি দেশে ফিরে আসলেই আমরা নারাজি দাখিল করবো।’ তিনি জানান, ‘পিবিআই যে প্রতিবেদন দিয়েছে আমরা তা মানি নি। আমরা মনে করছি মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত হয়নি। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আগে পিবিআই সালমান শাহর মায়ের সাথে যোগাযাগ করেনি।

সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিষয়টি জানতে পেরেছি। যাই হোক আমরা মামলাটি পুনরায় তদন্তের আবেদন করবো। র‌্যাব বা অন্য কোনো সংস্থাকে দিয়ে মামলাটি যেন পুনরায় তদন্ত করা হয়। সেটা না হলে আমরা উচ্চ আদালতে যাবো।’ প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটন রোডে নিজের বাসা থেকে শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন ওরফে সালমান শাহ’র লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই সময় সালমানের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই সালমানকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করা হয়। অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত।

তদন্ত শেষে ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। সেখানে সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে রিভিশন মামলা করা হলে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। দীর্ঘ প্রায় এক যুগ মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তাধীন ছিল। ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার তৎকালীন সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনেও সালমানের মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন।

২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি আবেদন করা হয়। নারাজি আবেদনে আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন সালমান শাহ’র হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা বলা হয়। আদালত নারাজি আবেদনটি মঞ্জুর করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানকে (র‌্যাব) মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। এরপর মামলাটিতে র‌্যাবকে তদন্ত দেওয়ার আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করেন।

ওই বছরের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর তৎকালীন বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে র‌্যাব মামলাটি আর তদন্ত করতে পারবে না বলে আদেশ দেন। এরপর ৭ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট লস্কর সোহেল রানা মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। গত বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন মর্মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই।